কোপা আমেরিকা ২০২১

 "যারা রিসেন্টলি সব ম্যাচ দেখছেন তারা আসলেই বুঝতে পারবেন, এখানে অনেক কিছুই বাস্তব সত্যি ! "


ফুটবলের অন্যতম বড় টুর্নামেন্ট ইউরো আর কোপা আমেরিকা চলছে । যারা দুইটা টুর্নামেন্টই দেখতেছেন তাদের একটা বড় অংশের মত হচ্ছে, রাতে ইউরো দেখার পর সকালে কোপা আমেরিকারে অনেকটা কাচ্চির পর পান্তা-ভাতের মত লাগতেছে । 

কথা সত্য । যারা ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, স্প্যানিশ লীগ, ইতালিয়ান লীগ নিয়মিত দেখেন তারা আরো ব্যাপারটারে ভালোভাবে কো-রিলেট করতে পারবেন । 

ইউরোপের খেলা অনেক অনেক বেশী গতিময়, স্মার্ট আর ওয়েল কো-অর্ডিনেটেড । দেখবেন ইয়া লম্বা লম্বা পাসগুলা মাঠের এই মাথা থেকে ঐ মাথায় খুব সহজেই প্লেয়ারদের খুঁজে দেয় । প্লেয়াররা শারীরিকভাবে অনেক বেশী শক্তিশালী । পুরো ৯০ মিনিট প্রায় সবাই দম ধরে রেখে খেলতে পারে । 

আরেকটা নোটেবল ব্যাপার হচ্ছে, ইউরোপের দলগুলোর মধ্যে শক্তির পার্থক্য দিন দিন কমছে । এখানে এখন আর কোন ছোট দল নেই । কোন দল হেসেখেলে ফাইনালে উঠতে পারছে না । সবারই সংগ্রাম করতে হচ্ছে । 

ইতিমধ্যে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, গেলবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন পুর্তগাল, জায়ান্ট জার্মানী টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে । প্রতিযোগিতা এতই বেশী যে, ইউরো জিতবে কে সেটা কোনভাবেই ধারনা করা যাচ্ছে না । 

 ওদিকে কোপা আমেরিকার দিকে তাকান । দলগুলার খেলা কেমন যেন খাপছাড়া, ছন্নছাড়া । খেলায় তেমন কোন গতি নেই । বড় ২-৩টা দলের সাথে বাকীদের শক্তির ব্যাবধান বেশ স্পষ্ট । সেমিফাইনাল, ফাইনালে কারা যাচ্ছে সেটা প্রেডিক্ট করা যাচ্ছে ।  ইন ফ্যাক্ট, ল্যাটিন আমেরিকার সেই যাদুকরী ড্রিবলিংও আর নেই । 

এইবার এখন পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড কাপ উইনারের তালিকার দিকে তাকান । এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশীবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল । এরপর জার্মানী আর ইতালি দু'দেশই চারবার করে । ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সেই ২০০২ সালে । 

সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে সেই ২০০২ এর পর প্রায় সব কয়টা টুর্নামেন্ট ছিল অল-ইউরোপিয়ান ফাইনাল । ব্যাতিক্রম শুধু ২০১৪ এর ওয়ার্ল্ড কাপ । আর্জেটিনা সেবছর শুধু ফাইনালে উঠতে পেরেছিল । ঐ একবার বাদ দিলে ল্যাটিন আমেরিকার কোন দল চ্যাম্পিয়ন হওয়া তো দূরের কথা ফাইনাল পর্যন্তই যেতে পারেনি । 

কেন ইউরোপ আগাচ্ছে, ল্যাটিন আমেরিকা পেছাচ্ছে ? এর মূল কারণ শিক্ষা, অর্থনীতি, টেকনোলজি, ট্রেইনীং আর প্রোপার সিস্টেম তৈরী করা । ধনী আর টেকনোলজিক্যালী এডভান্সড ইউরোপিয়ানরা যা পারছে ল্যাটিন তা পারছে না । 

ল্যাটিন আমেরিকা অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র। তারা ফুটবলে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে র-ট্যালেন্টের উপর বেশী নির্ভরশীল ছিল । অর্থাৎ, এমন ফুটবলার যারা সহজাত প্রতিভা নিয়ে জন্ম নেয় এবং যাদের আসলে তেমন একটা নারচারেরও দরকার পড়ে না । 

ল্যাটিন আমেরিকা এখনও দলনির্ভর নয় বরং ব্যাক্তি নির্ভর ফুটবল খেলে । আর্জেন্টিনা থেকে মেসিকে সরিয়ে দিলে আর ব্রাজিল থেকে নেইমার, মার্সেলোর মত দুই একজন সরিয়ে দিলে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা আর কোন দলই থাকে না । 

পক্ষান্তরে ইউরোপ আর ট্যালেন্টের আশায় বসে থাকেনি । তারা ব্যাক্তিনির্ভর নয় বরং দলনির্ভর খেলা খেলে । যতবড় নামই হোক না কেন সেই নামকে রিপ্লেস করার মত খেলোয়াড় তাদের রিসার্ভ বেঞ্চে  আছে । 

তারা তাদের লীগগুলোকে শক্তিশালী করেছে, একাডেমীগুলোকে যাবতীয় সুবিধা দিয়ে সাজিয়েছে, ট্রেইনীংয়ে সাইন্স এবং নতুন নতুন টেকনোলজি এড করে প্লেয়ারদের সক্ষমতা, একুরেসী বাড়িয়েছে, একেবারে রুট লেভেল থেকে জাতীয় দল পর্যন্ত প্লেয়ার উঠে আসার রাস্তা পরিষ্কার করেছে ।   

এসব কারণে, ল্যাটিন ফুটবল দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে আর ইউরোপিয়ান দলগুলো দিন দিন অগ্রসর হচ্ছে । দিন যত যাবে এই পার্থক্য আরো প্রকট হবে । 

দিনকে দিন প্রত্যেকটা সেক্টর প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে । লেখাপড়া, চাকরী সব জায়গাতে গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড দিন দিন হাই হচ্ছে । ভালো একটা চাকরী পাওয়া থেকে শুরু করে সেই চাকরীতে টিকে থাকা সবকিছু নির্ভর করছে আপনি প্রতিনিয়ত নিজেকে ডেভোলাপ করতে পারছেন কিনা । 

আপনি পড়ছেন, শিখছেন এটা এখন আর শেষ কথা নয় । আপনি কতটুকু স্মার্টলী শিখছেন, কিভাবে শিখছেন, কাদের কাছ থেকে শিখছেন এসব কিছুই এখন ম্যাটার করে । 

চাকরী কিন্তু অনেকেই পাচ্ছে । কিন্তু দ্রুত প্রমোশন তারাই পাচ্ছে, এগিয়ে তারাই যাচ্ছে যারা তাদের যোগ্যতার পারদটাকে দিনকে দিন উপর নিচ্ছে । 

আপনি কতটুকু ট্যালেন্টেড সেটা এখন আর খুব একটা ম্যাটার করে না । বরং আপনি কতটা স্মার্ট ওয়ার্ক করছেন, কতটুকু হার্ড ওয়ার্ক, কাদের কাছ থেকে ট্রেইনিং নিচ্ছেন, কতটুকু নেটওয়ার্কিং করছেন এসব কিছু অনেক বড় রোল প্লে করে । 

আপনার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে আপনি কি ইউরোপিয়ানদের মত আগায় যাবেন নাকি ল্যাটিনদের মত পেছাতে থাকবেন । 

হ্যাপি লার্নিং 🙂 


Courtesy: Capstone  Education

Post a Comment

0 Comments